চাতলা হাওরের চারিদিকে চা-বাগান মধ্যে তল অর্থ্যাৎ চা-তল, সেই চা-তল থেকেই সম্ভবত চাতলা নামকরণ হয়েছে। চাতলা হাওরের পূর্বে শিলকুড়ি, পশ্চিমে রোজকান্দি, নোনাপানি, দক্ষিণে বড়জালেঙ্গা ও উত্তরে বোরাখাই চা-বাগান অবস্থিত। এই চাতলা পরগণা বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। ধোয়ারবন্ধ থেকে শিলচর পর্যন্ত। কিন্তু আসল চাতলা হাওর যাকে বলা হয় বা হাওরের নিজস্ব এলাকা বলতে বড়জালেঙ্গা থেকে চেংকুড়ি-বোরাখাই পর্যন্ত ধরা হয়। হাওরের নীচু এলাকায় প্রধানত কৈবর্ত সম্প্রদায়ের লোকেরা বসবাস করে। এখানে প্রায় ২০/২৫টি গ্রাম আছে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে প্রায় ১২হাজার একরেরও বেশী জমিতে বোরধানের চাষ করা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতি বৎসরই কোন না কোন কারনে বোর ধানের ক্ষতি হয়। যেমন খরা, অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ও বিভিন্ন প্রকার পোকার আক্রমণ। যে সময়ে বোরধান কাটা হয় সেই সময় ঝড়-বৃষ্টির সময়। নীচু এলাকায় ধানের চাষ করা হয় তাই চতুর্দিকে উঁচু যায়গা থেকে জল বিভিন্ন নালা দিয়ে হাওরে জমে যায় এবং ধানের জমি ডুবিয়ে ফেলে। জল নিষ্কাশনের বিজ্ঞানসম্মত কোন ব্যবস্থা না থাকায় এরকম হয়। প্রায় ২০/২৫টি নালা দিয়ে জল চাতলাতে নেমে আসে আর একমাত্র ঘাঘরা নদী দিয়ে বরাক নদীতে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। ঘাঘরা নদীতে বড় বড় পাথর আটকে রয়েছে যার জন্য জল দ্রুত গতিতে যেতে না পেরে চাতলার ধানের জমি ডুবিয়ে ফেলে তখন চাষিদের আর কিছু করার থাকে না। অনেকেই মাছ ধরায় লেগে যায়। যাদের সামর্থ নেই তারা প্রতিদিন শিলচর শহরে গিয়ে দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। মিশরকে যেমন নীল নদের দু:খ বলা হয় তেমনি চাতলাকেও ঘাঘরা নদীর দু:খ বলা যেতে পারে! সরকার বালিছরি নদী সহ ঘাঘরাকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে খনন করার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করলে জল নিষ্কাশনের সুরাহা হবে এবং বন্যার কবল থেকে বোরধানকে রক্ষা করে স্থানীয় কৈবর্ত চাষিদের নি:স্ব হওয়া থেকে বাঁচানো যাবে।
চাতলা হাওরে বাঘমারা, হরিনগর, বৈরাগীটিলা, হরিণটিলা, শ্যামপুর, রাজপুর, সিঙ্গারিটিলা ও রতনপুর সহ প্রায় পঁচিশটি গ্রামে শুধু কৈবর্ত সম্প্রদায়ের লোকেরা বসবাস করে আসছে। শিক্ষার দিক দিয়ে অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া এই তপশীল সম্প্রদায় অধ্যূষিত অঞ্চলে শিক্ষার ব্যবস্থা বলতে শুধু বাঘমারায় ‘চাতলা জনতা এম.ই. স্কুল’ ও রাজপুরে ‘রাজপুর এম.ই. স্কুল’ই আছে। ২৫টি গ্রামের মধ্যে মাত্র ১০টি এল.পি. স্কুল আছে। বর্তমানে আরও ৪টি এল.পি. স্কুল সরকারি অনুদান পাওয়ার পথে। এই স্কুলগুলি আবার বর্তমান যুগেও একজন শিক্ষকদ্বারা পরিচালিত অথচ প্রতিটি স্কুলেই ক’মান সহ ৬টি শ্রেণী। এই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার মান কি হবে তা সহজেই অনুমেয়। রাজপুর এবং বাঘমারা গ্রামে ২টি জরাজীর্ণ ভেঞ্চার হাইস্কুল আছে। দীর্ঘদিন থেকে সরকারি অনুদান বা স্বীকৃতি না পেয়ে অনেক শিক্ষক কিছুদিন কাজ করে স্কুল ছেড়ে চলে যান। এই এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত মাসিক বেতন দেবার সামর্থ নেই। তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা এত খারাপ ষে পিতা-মাতার কাছে বেতনের টাকা চাইলে ছাত্র-ছাত্রীর পড়াই বন্ধ করে দেয়। এমতাবস্থায় এই তপশীল এলাকার ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করার আর সুযোগ থাকেনা। যারা সামান্য সচ্ছল তাদের ছেলেমেয়েরা এম.ই. স্কুলের পড়া শেষ করে হয় আইরংমারা নয়ত বোরাখাই হাইস্কুলে (৮/১০ কি.মি. দূর) গিয়ে লেখাপড়া করে এবং তুলনামূলক কম মার্কস্ পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়না। যারা একটু ভালভাবে পাশ করে তারা শিলচরের বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয় নয়ত বড়জালেঙ্গা উচ্চতর মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয়। স্নাতক স্তরে পড়াশোনার জন্য শিলচর গিয়ে বাড়ি ভাড়া করে থাকতে হয় যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অনেকেই বাড়ি থেকে যাওয়া আসা করে পড়তে গিয়ে মাঝ পথে পড়াই ছেড়ে দেয় আর্থিক অনটনের জন্য। চাতলা হাওরের জনসখ্যার মাত্র ২% মাধ্যমিক পাশ। হাজারে ২/৩ জন উচ্চতর মাধ্যমিক পাশ। স্নাতক উত্তীর্ণ প্রায় নেই বললেই চলে। এত কষ্ট করেও যারা পাশ করে তাদের সরকারি চাকুরি জুটেনা মার্কস্ কম থাকায়। বর্তমানে সরকারি আইনের কড়াকড়ির ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে এই অঞ্চলের পড়ুয়ারা চাকুরি পাবেনা কারন টেট অর্থাৎ ‘শিক্ষক নিরুপন যোগ্যতা’ নেই। ৫০% নম্বর নিয়ে কেউই পাশ করতে পারেনা। এই অঞ্চলে সরকারি চাকুরিয়ান বলতে যারা ভেঞ্চার স্কুল স্থাপন করে নিজেরা শ্রমদান করে স্কুল গ্রাণ্ট করেছেন সেই হাতেগুনা কয়েকজন স্কুল শিক্ষক আর বর্তমানে কিছু অঙ্গনওয়াড়ী ওয়ার্কার ও হেল্পার ছাড়া অন্য চাকুরিয়ান কেউ প্রায় নাই।
যে সকল ছেলে-মেয়ে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে চাকরি পায়নি তাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়, কারণ তারা কৃষিকাজ, মাছধরা বা অন্যের বাড়ির কোন কাজ করতে কুণ্ঠাবোধ করে। পরিতাপের বিষয় যারা কষ্ট করে করে লেখপড়া করে তাদের যে কত গঞ্জনা সহ্য করতে হয় তা বলে শেষ করা যাবেনা। এই অবস্থা দেখে সাধারণ গরীব লোকেরা তাদের ছেলে মেয়েদের আর পড়াতে চায় না। লেখাপড়া করে বেকার থাকবে অথচ কোন কাজ তাদের দ্বারা করানো যাবেনা এই ভয়ে পিতা-মাতা অনেক কে ছোট থাকতেই কোন না কোন কাজে লাগিয়ে দেয়। যতদিন পর্যন্ত মানুষের এই মানসিকতার পরিবর্তন না হবে ততদিন পর্যন্ত সর্বশিক্ষা, Right to Education, Adult Education, Non-formal Education আরও কত Education Scheme চালু করলেও গ্রামীণ জনগণের করুণ অবস্থা ফেরানো যাবেনা। বর্তমানে যা পরিলক্ষিত হয়, যারা উচ্চপদে চাকরি করেন বা বড় ব্যবসা করেন তাদের ছেলে-মেয়েরাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করছে। গরীবের কথা বিশেষভাবে কেউ চিন্তা করে না। দেশের ৮০% মানুষই গ্রামে বাস করে অথচ তাদের তেমন বিশেষ সুযোগ সুবিধা করে দিতে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেনা। know more from wikipedia en.wiki2.org/wiki/Chatla
******
প্রতাপ -সমাজ ও সাহিত্যের প্রতিভাস
পূজা সংখ্যা-১৪২১, পৃষ্টা সংখ্যা ৮-৯
Written by ।।রেবতী মোহন দাস।।
।শিক্ষক, চাতলা।
This site collects and organizes a list of restaurants around the world. You can find what interests you in just a few clicks and for free.
This site survives only with a few non-invasive banners, so we are asking you to disable any ADblock software. If you can alternatively continue find your favourites events somewhere else or LIKE this page
Leave a comment